প্রবৃত্তির আনুগত্যের ক্ষতি



জায়িজ ও না-জায়িজের তোয়াক্কা না করে নফসের সকল চাহিদা পূরনের কাজে লেগে যাওয়াকে প্রবৃত্তির আনুগত্য বলে।(বাতেনি বিমারিয়ু কি মালুমাত,পৃষ্ঠা ১০১)নিঃসন্দেহে নফসের চাহিদা পূরণে লেগে থাকা শুধু ক্ষতিই ক্ষতি।

প্রিয় নবী(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন,"তিনটি বিষয় ধ্বংসে নিক্ষেপ করে দেয়।১.লোভ ও লালসায় মগ্ন থাকা ২.নফসের আনুগত্য করা ও ৩.বান্দা নিজের ওপর গর্ব করা।(আল মুজামুল আওসাত,৪র্থ খন্ড,২১২ পৃষ্ঠা)

প্রবৃত্তির আনুগত্যের ধ্বংসলীলা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,"অতঃপর তাদের পর তাদের স্থলে ঐ অপদার্থ উত্তরাধিকারীগণ আসলো যারা নামাজ সমূহ নষ্ট করেছে এবং নিজেদের কু-প্রবৃত্তিগুলোর অনুসরণ করেছে।সুতরাং অনতিবিলম্বে তারা দোজখের মধ্যে"গাহ্য" এর জঙ্গল পাবে।"(সূরা মরিয়ম,আয়াত নং-৫৯)

প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা আপনারা জানলেন তো,নিজের কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে পারে ধ্বংসের কারণ।জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ।আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে বিবেক দিয়েছেন। কোন কাজ ভালো কোন কাজ খারাপ আমরা বুঝার ক্ষমতা আছে।তাই আমাদের উচিত নিজ নফসের অন্ধভাবে আনুগত্য না করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কাজ করা। তবেই আমরা সফলকাম হতে পারব।আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দিন।আমিন

✒Swadhin Ahmod Rezvi

ইশক্বে মুস্তফা (ﷺ)



আকুল নিবেদন এই যে, আমি আপনার এক নগণ্য গোলাম। ধরত্রীর এক বিচ্ছিন্ন ভূখন্ডে, প্রতিনিয়ত আপনার বিচ্ছেদে ছটফট করি।
আমি জানি আপনি এই গোনাহগার উম্মতদের আকুতি-মিনতি নিঃসন্দেহে অবগত, পরম করুণাময় রব আপনাকে সেই ক্ষমতা দিয়েছেন।
"তু কুজা, মান কুজা!(কোথায় আপনি আর কোথায় আমি!)
তু আমিরে হারাম, মে ফকিরে আজম!
প্রশংসাকারীগণ আপনার কী প্রশংসা করবে? লেখকরাই বা আপনার গুণগান কতটুকু লিখতে পারবে? আল্লাহর শপথ, সকল সমুদ্রও যদি কালিতে পরিণত হয়, আর গাছের ডালগুলােকে যদি কলম বানানাে হয়। তবুও জিন-ইনসান তাঁর মহিমা লিখে শেষ করতে পারবে না। সেই মর্যাদার সঠিক উপলব্ধিও তাদের পক্ষে অসম্ভব।"
ভালবাসার শাখা-শৃংখলে,
বিন্দু ফোঁটায় সিন্দু বইছে।
ধরাধম যখন ধূসরালোয় ম্লান-
ঐশী নূরে মরুর প্রান্তরে,
ভেসে আসে কার তান!
হে প্রিয় রাসূল মোর, প্রেমের অভিধান!"

✍ [এম.বি.সানি]
"আপনার মত সুন্দর কোন মানুষ আমার দু'চোখ কভু দেখেনি।
আপনার চেয়ে অধিক সুশ্রী কোন সন্তান, কোন মা কখনাে জন্ম দেন নি।
কোন ক্রটিই আপনাকে স্পর্শ করেনি।
যেমনটি আপনি চেয়েছিলেন, তেমন করেই যেন আপনার রব আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।
[মিশকাতুল মাসাবীহ শরীফ। অধ্যায়- প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম ও গুণাবলীর বর্ণনা, পৃষ্ঠা : ২১৮।]
তব প্রেম পিপাসায়, মম হৃদয় স্নাত।
অবলুন্ঠিত, অবিমিশ্র মায়া,
ঘেঁচড়া নিহীত ক্ষীণ অন্তর-কায়া!
ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) -
তব প্রেমের ক্ষুরধার খঞ্জরে,
বিলীন এ সফরনামা।"

✍ [এম.বি.সানি]
আপনি না হলে তো নিখিল বিশ্বের কিছুতেই সৃষ্টি হতো না। আমাদের স্বীয় আত্মার অস্তিত্বও তো নিজের নয়, বরং আপনার করুণায় পেয়েছি। এসেছি আপনার অস্তিত্বের উসীলায়,
কাল হাশরের মায়দানেও উথিত হব আপনার জন্য, আপনার উসীলায়, আপনারই দিকে।
"সৃষ্টিকূলের উৎসমূলের তিনিই উপাদান,
এক হতে আধিক্যে তিনি বেষ্টিত সমান।"
বন্যপশুরা আপনার নিকট নিজের কষ্টের কথা ব্যক্ত করেছে। আমি না হয় তাদের চেয়েও অধম, নালায়েক।
হায় মেরে আক্বা! একবার অর ফের বুলালিজিয়ে মুঝে।
মৃত্যুর পূর্বে একটাই আরজ, দীদার দিয়ে এই তপ্ত হৃদয়কে শীতল করে দিন। এ কেমন জীবন যদি আপনাকেই না পেলাম? আমি যে বরবাদ হয়ে যাব।
দীদারের আশায় বুক বাঁধি।"
✍ [এম.বি.সানি]
"হে সৃষ্টির সেরা মহামানব! আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমার আগ্রহী হৃদয় শুধু আপনাকেই চায়, আর কাউকে নয়। আপনার মহিমার শপথ! আমি আপনারই অনুরাগী। আল্লাহ জানেন, আমি আপনাকেই চাই। এ নিখিল ধরত্রীকে আপনি স্বীয় অনুগ্রহে পরিপূর্ণ করেছেন।"
"মগযে কুরআ, রূহে ঈমা, জানে দ্বী;
হাস্তে হুব্বে রাহমাতুল্লিল আলামীন।"
✍ আ'লা হযরত (রহঃ) হয়ত এজন্যই বলেছেন,
"লামইয়াতি নাযীরুকা ফী নাযারিন,
মিছলে তো না শোদ পয়দা জানা!"
হযরত ওয়াইছ করনী (রাঃ) দন্ত ফেলেছিলেন,
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) মদিনায় গড়াগড়ি খেতেন, আপনার আদবে জীবনে যিনি মদিনা শরীফের তপ্ত বালিকণার উপর কখনো জুতা পায়ে হাঁটেন নি। আমরা ভুল গেছি সেই আদব তাই হয়ত আপনাকে খুঁজে পাই না।
আপনারই ভালবাসায় ইমাম মালেক (রহঃ) কোন দিন মদিনা ত্যাগ করেন নি, মদিনার বাইরে মৃত্যুবরণের আশংকায়।
ভাবি সেই দিনগুলো, যখন আপনার চরণধূলি চম্বুনে মরুর বালিকণাগুলো আপ্লুত হয়ে যেত।
কখনো বা আপনার বিচ্ছেদে মৃত খেজুর গাছ কান্নায় ভেঙে পড়ত।
আহ! কেমন ছিল সেই দিনগুলো আপনাকে দেখে রাস্তার চারপাশের পাথরগুলোও সালাম দেয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ত, আমি যদি সেই পাথর হতাম তাহলে কতই না সৌভাগ্যবান হতাম! হযরত বেলাল (রাঃ)'র আজানের ধ্বনিতে উন্মাদ করা লুকন্ত ভালবাসাগুলো না জানে কেমন ছিল!


ইশক্বে মুস্তফা (ﷺ)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
হে প্রিয়ংবদ রাসূল, প্রিয় আক্বা (ﷺ),
কবি শেখ সাদী (রহঃ) কতই সুন্দর লিখেছেন,
সকল প্রশংসা আল্লাহ্ (ﷻ)'র যিনি প্রেরণ করেছেন আপনার ন্যায় এমন চরম প্রশংসিত রাসূল, মুক্তির দূত আর ভালবাসার মূর্তপ্রতীক। আবহমান কাল ধরে, দিবা-রাত্রির প্রাচীর ভেদ করে, তামাম মাখলুকাত আপনার শান-সিফাত বর্ণনায় বিভোর ছিল। এর জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ যে, স্বয়ং রব আপনার সসর্বশ্রেষ্ঠ শান বর্ণনাকারী। আপনার প্রশংসাগাঁথা আলমে আরওয়াহ থেকে শুরু ছিল কিয়ামত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।
✍ ইমাম নু'মান বিন সাবিত (রহঃ) কতই না সুন্দর বলেছেনঃ
"ইশকের নহরে, জীবনের প্রহরে,
আপনার (ﷺ) সভাকবি ✍ হযরত হাসসান ইবনে সাবিত (রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু) কতই উত্তম বলে গেছেন,
"সীমাহীন অন্তরীক্ষে, হৃদয় নিংরানো
ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)-
✍ আ'লা হযরত (রহঃ) কতই উত্তম বলেছেন,
আপনার তরে আমার ইহকাল-পরকাল সব কোরবান হউক। জঙ্গলের নেকড়ে আর হরিণীও আপনার নিকট আশ্রয় ও নিরাপত্তা লাভের করেছে। এই অধমকেও আপনার করুণার ছায়াতলে আশ্রয় দান করুন।
"আপনার নামে করুণা যাচি,
ইমাম নু'মান বিন সাবিত (রহঃ) এর ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে,
হে প্রিয় রাসূল (ﷺ)! আপনার প্রতি ভালবাসা ইমানের পূর্বশর্ত। ✍ তাই তো আশিকে রাসূল কবি আল্লামা ইকবাল (রহঃ) কতই সুন্দরভাবে সেই বাস্তবতা লিখেছেন,
আপনার শানে নাজিল হয়েছে সমগ্র আল-কুরআন। আপনার চরিত্র বর্ণনাকারী স্বয়ং রব তা'য়ালা।
ইয়া ত্বয়াহা, হে ইয়াসিন! আপনার নূরের ফুল (আহলুল বায়আত) সৌরভ ছড়াবে কিয়ামত পর্যন্ত। আপনার নিকট লিখছি হে পবিত্র পরমাত্মা যার ভালবাসায়,
ইয়া মুদ্দাচ্ছির, ইয়া মুজাম্মিল! আমি না জানি ভক্তি, না জানি স্তুতি, কি শব্দ সম্ভারে, কি বাক্যগাঁথায় আপনাকে স্মরণ করতে হয় তাও জানি না। ওগো প্রিয় রাসূল, আপনাকে পাওয়ার আশায় হৃদয় বড় ব্যাকুল। ভাঙা হাতে, রিক্ত কালিতে এমন স্বত্তাকে কিভাবে ডাকি?
ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আজও ভাবনার রাজ্যে পারি জমাই, কেমন ছিল সেই দিনগুলো। যেদিন আপনার শুভ আগমনে আসমানের চাঁদ ঢলে পড়েছিল, আপনার আঙুলের ইশারায় চাঁদও খেলনা হয়ে দোলত? কতইনা পবিত্র ছিল সে মুহুর্ত।
অতএব, ইয়া সায়্যিদিল আবরার (ﷺ) আমার অপূর্ণতাকে পূর্ণ করে দিন। মনের ব্যাকুলতাকে আকুলভাবে আপনার কদম মুবারকে টেনে নিন। আশ্রয়হীন আমাকে করুণাময় রব (ﷻ)'র ওয়াস্তে আশ্রয় দান করুন, গোস্তাখী মার্জনা করে আপনার দীদারে ধন্য করুন।

____________________________
✍ কৃতঃ (মাসুম বিল্লাহ সানি)

দরসে হাদিসঃ মানুষের প্রতিটি অঙ্গের যিনা



عن ابی هریرة قال قال رسول الله ﷺ ان الله کتب علی ابن ادم حظه من الزنا ادرک ذٰلک لا محلة فزنا العین النظرو زنا اللسان المنطق والنفس تمنی وتشتهی والفرج یصدق ذلک ویکذبه۔(متفق علیه)
وفی رویة لمسلم قال کتب علی ابن ادم نصیبه من الزنا مدرک ذٰلک لا محالة العینان زناهما النظرو الا ذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الکلام والید زناها البطش والرجل زناها الخطٰی والقلب یهوی ویتمنی ویصدق ذٰلک الفرج ویکذبه۔
অনুবাদ : হযরত আবু হোরাইরা (رضی الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুজুর (ﷺ) এরশাদ করছেন, " আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি মানুষের জন্য তার যিনার অংশ লিপিবদ্ধ করেছেন , যা সে অবশ্যই পাবে ৷সুতরাং চক্ষুর যিনা হচ্ছে কুদৃষ্টি , আর জিহ্বার যিনা হচ্ছে আলোচনা করা ৷আর মনে প্রবৃত্তি ইচ্ছা ও কামনা করে আর লজ্জাস্থান ওই কামনাকে সত্যায়িত কিংবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে ৷—(বোখারী,মুসলিম) 
আর ইমাম মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, আদম —সন্তানদের ঊপর যিনার অংশ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে,যা সে অবশ্যই পাবে ৷ চক্ষুর যিনা হচ্ছে দেখা, কানের যিনা হচ্ছে শ্রবণ করা এবং জিহ্বার যিনা হচ্ছে, আলোচনা করা, হাতের যিনা স্পর্শ করা, পায়ের যিনা পা বাড়ানো এবং মনের প্রবৃত্তি ইচ্ছা ও কামনা করে, আর লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য কিংবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে ৷

✏🍭کتب علی ابن اٰدم ۔
এর ব্যাখ্যা : এখানে 'প্রতিটি মানূষ ' দ্বারা সাধারণ মানুষ বুঝানো উদ্দেশ্য ৷যা থেকে, বাল্যকালে মৃত্যুবরণকারী সন্তানগণ ,বিশেষ করে সম্মানিত নবীগণ রাসুলগণ,আউলিয়ায়ে কেরামগণ স্বতন্ত্র৷যারা সম্মানিত নবীগণকে এর অন্তর্ভুক্ত বলে বিশ্বাস করে তারা বে — দ্বীন ৷ অর্থ এ যে,সাধারণত মানুষ  যিনা কিংবা যিনার আনুষান্ঙ্গিক বিষয়াদিতে জড়িয়ে পড়ে ৷আল্লাহ তা'আলার বড় অনুগ্রহ এ যে , অন্ঙ্গ — প্রত্যন্ঙ্গের অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়া ও নিছক কুধারণার জন্য পাকড়াও করেননা ৷ 
হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস — ই দেহলভী (র) তাঁর আশি'আতুল লুম'আত গ্রন্থে লিখেছেন,যিনার অংশ মানে যিনার মাধ্যমসমূহ ৷এভাবে যে, মানুষের মধ্যে যৌন প্রবৃত্তি এবং নারীর প্রতি আসক্তি স্বভাবগতভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে ; কিন্তু আল্লাহ যাকে চান তাকে তা থেকে রক্ষা করেন ৷
স্মার্তব্য যে , হযরত ইউছুফ (علیه السلام) র পবিত্র হ্নদয়ে ওই বিশেষ সময়ে যুলাইখার প্রতি বিন্দুমাত্রও আসক্তি জন্মেনি ৷ 

🍭✏فزنا العین النظر۔
এর ব্যাখ্যা : পরনারীর প্রতি আসক্তির কারণে ৷
স্মার্তব্য যে, হঠাৎ দৃষ্টি পতিত হওয়া ক্ষমাযোগ্য ৷ ইচ্ছাকৃত দেখার জন্য পাকড়াও করা হবে ৷ এখানে দ্বিতীয় প্রকার দৃষ্টি বুঝানো উদ্দেশ্য ৷ 

✏🍭وزنا اللسان المنطق۔
এর ব্যাখ্যা : পরনারীদের সৌন্দর্যের প্রশংসা করা জিহ্বা বা মুখের যিনা , তা সাগ্রহে তৃপ্তিসহকারে উপভোগের জন্য শ্রবণ করা কানের যিনা ৷কোন কোন মহিলা স্বীয় স্বামীর নিকট অন্য মহিলার রুপ ও গুণ বর্ণনা করে থাকে ৷ এটা গুরুত্বর অপরাধ ৷ 

✏🍭وا لاذنان زنا هما الاستماع۔
এর ব্যাখ্যা : কান লাগিয়ে মনযোগ সহকারে ৷ এ জন্য এখানে  استماع— باب افتعال  থেকে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ 

🍭✏والرجل زناهما الخطٰی ۔
এর ব্যাখ্যা : সারকথা এ যে, একটি যিনা অনেকগুলো ছোট ছোট যিনার সমষ্টি ৷প্রত্যেক অন্ঙ্গের যিনা আলাদা৷ যিনাকারী যিনা করার সময়  চোখ ,কান, জিহ্বা, হাত, পা সমস্ত অন্ঙ্গের যিনা করে থাকে ৷ এ জন্যই 'কন্কর নিক্ষেপ' করা হয় ; শুধু খাসি করা হয় না৷ 

✏ویصدق ذٰلک الفرج ویکذبه۔
এর ব্যাখ্যা : সুতরাং মানুষের উচিত , যিনার আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি থেকেও নিজেকে রক্ষা করা ৷সিনেমা রেডিও টেলিভিশন ইত্যাদিতে ফিল্মী গান ও চলচ্ছিত্র প্রচার প্রসার ও প্রদর্শনের কুফল লক্ষ্য করা যাচ্ছে ৷


🖋সাবিহা জান্নাত নুরী

নামাযে পাগড়ী না বেঁধে রুমালকে ঘোমটার ন্যায় দুই পাশে ঝুলিয়ে দেয়া



প্রশ্ন: ইদানিং কিছু ইমামকে দেখা যায় নামাযে পাগড়ী না বেঁধে রুমালকে মহিলার ঘোমটার ন্যায় দুই পাশে ঝুলিয়ে দেয়। রুকু সাজদার সময় টেনে টেনে ঠিক করতে দেখা যায়। ইমামের এহেন কাজ শরিয়তে কতটুকু বৈধ বা অবৈধ এ ব্যাপারে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর: পাগড়ী পরিধান করা সুন্নাতে মুস্তাহাব্বা। পাগড়ী পরিধান করার ফজিলত হাদীসে পাক দ্বারা সাব্যস্ত। পাগড়ী বেঁধে নামায আদায়ের সাওয়াব পাগড়ী ছাড়া নামায আদায়ের চেয়ে ২৫ থেকে ৭০ গুণ বেশি। যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
এ ছাড়াও হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে- عَلَيْكُمْ بِالعمائم فاِنّها سيماءُ الملائكة- অর্থা- তোমরা পাগড়ী বাঁধবে, কেননা এটা ফেরেশতাদের প্রতীক। [শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নম্বর ৬২৬২, কৃত: ইমাম বায়হাকী রাহ.] অপর হাদীসে পাকে রয়েছে ‘তোমরা পাগড়ী পরিধান কর, নিশ্চয় পাগড়ী ইসলামের নিদর্শন এবং তা মুসলমান ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্যকারী। [তিরমিযি শরীফ: ১ম খণ্ড, ৩০৮ পৃষ্ঠা]

নামাযে ‘সদল’ বা কাপড় তথা চাদর বা রুমাল ঝুলিয়ে দেয়া মাকরূহে তাহরীমি। যেমন মাথা বা কাঁধের উপর চাদর, রুমাল, শাল ইত্যাদি এমনভাবে রাখা যে, উভয় প্রান্ত সরাসরি ঝুলতে থাকে। তবে যদি এক প্রান্ত এক কাধেঁর উপর রাখা হয় এবং অপর প্রান্ত ঝুলতে থাকে তাহলে অসুবিধা নেই। আজকাল দেখা যায়, কোন কোন নামাযী ও ইমাম মাথা বা কাধেঁর উপর এমনভাবে রুমাল ঝুলিয়ে রাখে যা রুকু অবস্থায় গলা, মাথা ও কাধেঁর উভয় প্রান্তে সরাসরি লটকে ও ঝুলে থাকে। এভাবে নামায পড়া মাকরূহ। এটা পাগড়ী বা আমামা নয় বরং নামাযের প্রতি অবহেলা।

তাছাড়া নামায অবস্থায় বার বার নড়াছড়া করা বা নামাযে আস্তিন, রুমাল বা চাদর বারবার উপরের দিকে এমনভাবে কুড়িয়ে নেয়া যাতে হাতের কুনুইগুলো প্রকাশ পায় তখনও নামায মাকরূহ হবে। এটা নামাযের প্রতি চরম অবহেলা ও অবজ্ঞা। নামাযের প্রতি অবশ্যই যত্নবান ও আন্তরিক হতে হবে নতুবা অবশ্যই গুনাহগার হবে। [ফাতহুল ক্বদীর, বাহরুর রায়িক এবং ফতোয়ায়ে রযভীয়া: ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৬ ও ৪২৩]

সালাফিরা এ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে



সালাফি তথা আহলে হাদিসরা এ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, বিশেঃষত নামায নিয়ে। 

অথচ ইমাম যাহাবি (রহ) বলেন- 

 هذا قول أهل السُّنّة والجماعة-‘

‘এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা যে কবিরা গুনাহের দরুন (ফাসেক হবে) কেউ কাফির হবে না।’’ ২১৯ 

ইমাম সুয়ূতী (রহ) বলেন-

لِأَنَّ مَذْهَبَ أَهْلِ السُّنَّةِ أَنْ لَا يَكْفُرَ أَحَدٌ بِذَنَبٍ

-‘‘আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব হলো কেউ গুনাহের কারণে কাফের হয়না।’’ ২২০ 

আহলে হাদিসদের মুহাদ্দিস মোবারকপুরী বলেন-

وَقَالَ الْقَاضِي عِيَاضٌ وَهُوَ مَذْهَبُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَأَمَّا الْكَبَائِرُ فَلَا يُكَفِّرُهَا إِلَّا التَّوْبَةُ

-‘‘ইমাম কাজী আয়ায (রহ) এর এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মাযহাব হল কবিরাহ গুনাহের জন্য কেউ কাফির হবে না; যদিও তা তাওবা ছাড়া মাফ হয় না।’’২২১ 

তাই নামাযসহ বিভিন্ন ইবাদত কেহ না করলে তাকে কাফির বলা যাবে না; যতক্ষণ না সে এগুলো অস্বীকার না করবে।

হাদিস শরীফে কয়েকটি বাতিল ফিরকার নাম



হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বাণীসমূহে উম্মতের যাবতীয় বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। হালাল-হারাম, করণীয় ও বৰ্জনীয় সবকিছু উম্মতের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে গেছেন। সুন্নাহ যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দান করেছেন। তিনি আপন উম্মতকে ঈমানের পর নামায, রোযা ইত্যাদি পূণ্য কাজের প্রতি যত্নবান হবার কার্যত শিক্ষাদান করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি উমতের মধ্যে নানা ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব সম্পর্কে কখনো সংক্ষেপে আবার কখনো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা দিয়েছেন, যাতে সরলপ্রাণ মুসলমান কখনো তাদের বাহ্যিক চাল-চলন, আচার-আচরণ, সুন্দর সুন্দর কথায় প্রতারিত না হয়। এমনকি তাদের স্বযত্নে নামায-রোযা ও সুললিত কণ্ঠের তেলাওয়াতে কোরআন শুনেও তাদের ভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে না পড়ে, তজ্জন্য হুশিয়ার করে দিয়েছেন। নিম্নে সরলপ্রাণ মুসলমানদের জ্ঞাতার্থে ঐসব হাদিস শরীফ পেশ করা হলো।

উল্লেখ্য যে, হাদিস শরীফে কয়েকটি বাতিল ফিরকার নাম সহ বর্ণিত হয়েছে।

যথা-খারেজী,কদরীয়া, মুরজিয়া ও জাহমীয়া। এটা হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের "ইলুমে গায়েব’ বা অদৃশ্য জ্ঞানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিশুদ্ধ হাদিগ্রন্থগুলোতে ঐসব ফিরকার বর্ণনায় পৃথক পৃথক অধ্যায় রয়েছে সিহাহ সিত্তা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিসের কিতাব । যথা, বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আবুদাউদ শরীফ, তিরমিযি শরীফ ও ইবনে মাজা শরীফে অন্যান্য বাতিল ফিরকার চেয়ে ‘খারেজীদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা বিদ্যমান। কারণ, এ দলটি মুসলমানদের মধ্যে বাতিল দলসমূহের সর্বপ্রথম দল। পরবর্তী সকল বাতিল ফিরকার মধ্যে তাদের কিছু কিছু আক্বীদা ও চরিত্র বিদ্যমান। যুগে যুগে ভিন্ন ভিন্ন
নামে বিভিন্ন ফিরকার আত্মপ্রকাশ ঘটলেও মৌলিক ক্ষেত্রে খারেজীদের সাথে তাদের সাদৃশ্য রয়েছে। তাই খারেজীদের সম্পর্কেই সর্ব প্রথম আলোচনা করছি।


পবিত্র কোরআনের পর ইসলামী জগতের সর্বাধিক বিশুদ্ধ কিতাব বোখারী শরীফের দ্বিতীয় খণ্ডে ইমাম বোখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নিম্নোক্ত শিরোনামে একটা অধ্যায় পেশ করেন।

باب قتال الخوارجوالملحدين
অর্থাৎ খারেজী ও মুলহীদীনদের (বাতিল আক্ৰীদা পোষণকারী) হত্যা করার বিধান সম্বলিত অধ্যায়।

অতঃপর তিনি উক্ত অধ্যায়ে একটি হাদিসে ‘মওকুফ’ (১) বর্ণনা করেন-

وكان ابن عمر يراهم شرارخلق الله وقال انطلقوا إلى آيات نزلت فى الكفار فجعلو ها على المومنين-
অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহ তা'আলা আনহুম খারেজীদেরকে আল্লাহর সৃষ্টিতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মনে করতেন। অতঃপর তিনি তার কারণ হিসেবে বলেন, নিশ্চয়ই তারা (খারেজীগণ) ঐ সব আয়াতের প্রতি মনোনিবেশ করেছে যেগুলো কাফিরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।অতঃপর ঐসব আয়াতকে ঈমানদারদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। (বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা ১০২৪)

আলোচ্য হাদিসে হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা খারেজীদের গোমরাহীর মূল কারণ হিসেবে যে বিষয়টিকে চিহ্নিত করেছেন তা কুফর, শিরক ও কবীরা গুনাহর মতো বাহ্যতঃ মনে না হলেও এটাই ভ্ৰষ্টতার মূল বিষয়।কারণ, এতে পবিত্র কোরআনের জঘন্যতম বিকৃতি ও মনগড়া ব্যাখ্যারই শামীল।এটা এমন একটি জঘন্য বিষয় যা আজ পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক বাতিল ফিরকার মধ্যে পাওয়া গেছে এবং বর্তমানেও পরিলক্ষিত হয়। প্রায় প্রত্যেক বাতিল ফিরকা নিজেদের ভ্ৰান্তি প্রচারে পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফের কৃত্রিম আশ্রয় গ্রহণ করে এবং মনগড়া ব্যাখ্যার মাধ্যমে সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে গোমরাহ করে থাকে।