হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বাণীসমূহে উম্মতের যাবতীয় বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। হালাল-হারাম, করণীয় ও বৰ্জনীয় সবকিছু উম্মতের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে গেছেন। সুন্নাহ যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দান করেছেন। তিনি আপন উম্মতকে ঈমানের পর নামায, রোযা ইত্যাদি পূণ্য কাজের প্রতি যত্নবান হবার কার্যত শিক্ষাদান করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি উমতের মধ্যে নানা ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব সম্পর্কে কখনো সংক্ষেপে আবার কখনো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা দিয়েছেন, যাতে সরলপ্রাণ মুসলমান কখনো তাদের বাহ্যিক চাল-চলন, আচার-আচরণ, সুন্দর সুন্দর কথায় প্রতারিত না হয়। এমনকি তাদের স্বযত্নে নামায-রোযা ও সুললিত কণ্ঠের তেলাওয়াতে কোরআন শুনেও তাদের ভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে না পড়ে, তজ্জন্য হুশিয়ার করে দিয়েছেন। নিম্নে সরলপ্রাণ মুসলমানদের জ্ঞাতার্থে ঐসব হাদিস শরীফ পেশ করা হলো।
উল্লেখ্য যে, হাদিস শরীফে কয়েকটি বাতিল ফিরকার নাম সহ বর্ণিত হয়েছে।
যথা-খারেজী,কদরীয়া, মুরজিয়া ও জাহমীয়া। এটা হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের "ইলুমে গায়েব’ বা অদৃশ্য জ্ঞানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিশুদ্ধ হাদিগ্রন্থগুলোতে ঐসব ফিরকার বর্ণনায় পৃথক পৃথক অধ্যায় রয়েছে সিহাহ সিত্তা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিসের কিতাব । যথা, বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আবুদাউদ শরীফ, তিরমিযি শরীফ ও ইবনে মাজা শরীফে অন্যান্য বাতিল ফিরকার চেয়ে ‘খারেজীদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা বিদ্যমান। কারণ, এ দলটি মুসলমানদের মধ্যে বাতিল দলসমূহের সর্বপ্রথম দল। পরবর্তী সকল বাতিল ফিরকার মধ্যে তাদের কিছু কিছু আক্বীদা ও চরিত্র বিদ্যমান। যুগে যুগে ভিন্ন ভিন্ন
নামে বিভিন্ন ফিরকার আত্মপ্রকাশ ঘটলেও মৌলিক ক্ষেত্রে খারেজীদের সাথে তাদের সাদৃশ্য রয়েছে। তাই খারেজীদের সম্পর্কেই সর্ব প্রথম আলোচনা করছি।
পবিত্র কোরআনের পর ইসলামী জগতের সর্বাধিক বিশুদ্ধ কিতাব বোখারী শরীফের দ্বিতীয় খণ্ডে ইমাম বোখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নিম্নোক্ত শিরোনামে একটা অধ্যায় পেশ করেন।
باب قتال الخوارجوالملحدين
অর্থাৎ খারেজী ও মুলহীদীনদের (বাতিল আক্ৰীদা পোষণকারী) হত্যা করার বিধান সম্বলিত অধ্যায়।
অতঃপর তিনি উক্ত অধ্যায়ে একটি হাদিসে ‘মওকুফ’ (১) বর্ণনা করেন-
وكان ابن عمر يراهم شرارخلق الله وقال انطلقوا إلى آيات نزلت فى الكفار فجعلو ها على المومنين-
অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহ তা'আলা আনহুম খারেজীদেরকে আল্লাহর সৃষ্টিতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মনে করতেন। অতঃপর তিনি তার কারণ হিসেবে বলেন, নিশ্চয়ই তারা (খারেজীগণ) ঐ সব আয়াতের প্রতি মনোনিবেশ করেছে যেগুলো কাফিরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।অতঃপর ঐসব আয়াতকে ঈমানদারদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। (বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা ১০২৪)
আলোচ্য হাদিসে হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা খারেজীদের গোমরাহীর মূল কারণ হিসেবে যে বিষয়টিকে চিহ্নিত করেছেন তা কুফর, শিরক ও কবীরা গুনাহর মতো বাহ্যতঃ মনে না হলেও এটাই ভ্ৰষ্টতার মূল বিষয়।কারণ, এতে পবিত্র কোরআনের জঘন্যতম বিকৃতি ও মনগড়া ব্যাখ্যারই শামীল।এটা এমন একটি জঘন্য বিষয় যা আজ পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক বাতিল ফিরকার মধ্যে পাওয়া গেছে এবং বর্তমানেও পরিলক্ষিত হয়। প্রায় প্রত্যেক বাতিল ফিরকা নিজেদের ভ্ৰান্তি প্রচারে পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফের কৃত্রিম আশ্রয় গ্রহণ করে এবং মনগড়া ব্যাখ্যার মাধ্যমে সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে গোমরাহ করে থাকে।

0 Post a Comment:
Post a Comment